একসাথে দুই প্রিয়জনের মৃত্যু— এমন ভয়াবহ শোকের দিন হয়তো কোনো পরিবারের জন্যই কল্পনাও করা সম্ভব নয়। কিন্তু লংকারচরের জালাল আহমেদের পরিবারকে সেই অমোঘ নিয়তির শিকার হতে হলো। মেয়ের চল্লিশার দিনে বাবার লাশের ফিরতি— দৃশ্যটা যেন কোনো সিনেমার কাহিনি নয়, বরং বাস্তবের নির্মম গল্প।
২রা মে (শুক্রবার) সকালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানার হযরতপুর ইউনিয়নের লংকারচরে সরকারি রাস্তার মেরামত কাজ তদারকিতে ছিলেন ইউপি সদস্য জালাল আহমেদ (৫৫)। কাজের ফাঁকে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে একটি বাড়িতে যান। কিন্তু কে জানত, সেই যাওয়া হবে জীবনের শেষ যাওয়া? কিছুক্ষণ পরেই মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন তিনি।
গ্রামের মানুষ দৌড়ে এল। প্রাণপণ চেষ্টায় দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলো তাকে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস— চিকিৎসক জানালেন, আর কিছুই করার নেই।
মৃত্যু তার জন্য অপেক্ষা করছিল সেদিন সকালে। আর সেই সময়েই জালাল আহমেদের বাড়িতে চলছিল অন্য এক আয়োজন। ছোট মেয়ে, যে ক’দিন আগেই সবাইকে কাঁদিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছে, তার চল্লিশার দোয়া-মাহফিল। বাড়ির উঠানে বসা আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরা অপেক্ষা করছিলেন জালাল আহমেদের জন্য। কিন্তু তিনি ফিরলেন লাশ হয়ে, কাফনের কাপড়ে মোড়া হয়ে।
দুটি লাশ, দুই শোক, এক পরিবার। এমন দৃশ্য দেখে চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি কেউ। কেবল কান্নার শব্দ ভেসে এলো লংকারচরের প্রতিটি ঘর থেকে।
জালাল আহমেদ ছিলেন আট ভাইবোনের মধ্যে চতুর্থ। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে রেখে গেছেন। বিকেল ৩টায় জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
তার মৃত্যুতে পুরো এলাকা শোকের ছায়ায় ছেয়ে গেছে। শোকবার্তা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক ডাকসু ভিপি আমান উল্লাহ আমান এবং ঢাকা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার ইরফান ইবনে আমান অমি।
তার প্রতিবেশী রহমান মিয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, জালাল ভাই শুধু মেম্বার ছিলেন না, আমাদের অভিভাবক ছিলেন। মেয়ের চল্লিশা করতে গিয়ে নিজেই চলে যাবেন— এটা কখনো ভাবতে পারিনি।
এখন লংকারচরের বাতাসেও শোক। দুটো কবর, দুটো প্রিয়জন, এক পরিবার— সান্ত্বনার ভাষা হারিয়ে গেছে চারপাশে।