রাজধানীর অভিজাত বেইলি রোড এলাকায় র্যাব ১০ এর এক সফল অভিযানে উদ্ধার হয়েছে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ৩টি কষ্টিপাথরের মূর্তি এবং বিপুল পরিমাণ বিদেশি ব্র্যান্ডের মদ। অভিযানে ৪ জন চোরাচালান সিন্ডিকেট সদস্যকে আটক করা হয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব মূল্যবান প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে।
২৭ মে (মঙ্গলবার) রাত নয়টায় র্যাব ১০ এর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-১০ এর অধিনায়ক এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এই তথ্য জানান।
তিনি জানান, গোপন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আজ ২৭ মে, মঙ্গলবার বিকেল আনুমানিক ৩টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বেইলি হাইটসের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাটে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে আনুমানিক ৩৪ কোটি টাকা মূল্যমানের ৩টি কষ্টিপাথরের মূর্তি ও প্রায় ৪০ লাখ টাকা মূল্যের ১১০ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ জাকির হোসেন (৬৫), আহমদ মোস্তফা (৪৪), মো. আনারুল হক (৪৮) এবং মো. হাবিবুর রহমান (৪২)। তারা ভোলা, রংপুর, ময়মনসিংহ ও মাদারীপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা।
উদ্ধারকৃত কষ্টিপাথরের মূর্তিগুলোর মধ্যে একটি বিষ্ণু মূর্তির ওজন ৮৮.৯৫০ কেজি এবং উচ্চতা ৪২.৫ ইঞ্চি, আরেকটি বিষ্ণু মূর্তির ওজন ১৯.৬৫০ কেজি ও উচ্চতা ২৬.৫ ইঞ্চি। তৃতীয়টি একটি গরুর মূর্তি, যার ওজন ৯২.৬৯০ কেজি এবং উচ্চতা ২২.৫ ইঞ্চি। প্রত্যক্ষদর্শীদের ধারণা, মূর্তিগুলো শত শত বছর পুরোনো এবং এটি দেশের প্রাচীন শিল্পকলার নিদর্শন।
তিনি আরও জানান, এসব মূর্তি প্রাথমিকভাবে ঢাকার রাজেন্দ্রপুর বাজারের এক স্বর্ণকারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কষ্টিপাথরের তৈরি বলেই শনাক্ত করা হয়েছে। প্রাচীন এই নিদর্শনগুলো বাংলাদেশের প্রত্নতাত্ত্বিক ইতিহাস, ধর্মীয় বিশ্বাস এবং শিল্প ঐতিহ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সংস্থাটি মনে করে, এগুলো শুধু চোরাচালানের হাত থেকে উদ্ধার করাই নয়, বরং এগুলোকে সংরক্ষণ করা একটি জাতীয় দায়িত্ব।
র্যাব ১০ অধিনায়ক আরও জানান, আটক হওয়া আসামিরা পরস্পরের সঙ্গে যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কষ্টিপাথরের মূর্তি ও মাদক সংগ্রহ করে পাচার করে আসছিল। তারা মূলত দ্রুত লাভের আশায় এই চক্র গড়ে তোলে।
তিনি জানান, উদ্ধারকৃত মূর্তিগুলোকে রাষ্ট্রীয় জাদুঘরে সংরক্ষণের আহ্বান জানাই, যাতে সাধারণ দর্শক, গবেষক এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও শিল্প ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়।
গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে বলে তিনি জানান।