ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জ বাজারে অবস্থিত মোল্লা মেডিকেল হল নামক ফার্মেসীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ভুয়া ডাক্তার সেজে চিকিৎসা প্রদানকারী এক প্রতারককে আটক করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিনাত ফৌজিয়ার নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে আটক হন আবু ফরহাদ মাহাবুব নামের ওই ব্যক্তি, যিনি নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের তদন্তে দেখা যায়, মাহাবুবের প্রদত্ত বিএমডিসি রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি ভুয়া ও জালিয়াতিপূর্ণ। তার চিকিৎসা প্রশিক্ষণের কোনো বৈধ সনদ বা প্রমাণাদি নেই। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী, তাকে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং ১৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। পড়ে তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
অভিযানকালে আরও উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী মেডিকেল অফিসার ডা. মো. মাজহারুল হক তানিম, কোনাখোলা পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দিন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পেশকার মো. রাসেল, স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশের সদস্যবৃন্দ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন,
ভুয়া চিকিৎসকেরা শুধু আইনভঙ্গ করেন না, তারা সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য ও জীবন নিয়েও জুয়া খেলেন। এ ধরনের প্রতারণা কঠোর হস্তে দমন করা হবে।
তিনি আরও জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত নজরদারির মাধ্যমে অবৈধ ও প্রতারক চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এলাকাবাসীকে পরামর্শ দিয়েছেন, চিকিৎসা গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিএমডিসি নিবন্ধন যাচাই করার জন্য।
এছাড়া, স্থানীয়দের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে যেন যে কোনো ধরণের সন্দেহজনক চিকিৎসা কার্যক্রমের খবর দ্রুত প্রশাসনকে জানান।
এই অভিযানে এলাকাবাসীর মধ্যে প্রশাসনের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে জানান, মোল্লা ফার্মেসিতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ভুল ওষুধ বা ভুল চিকিৎসার অভিজ্ঞতা তাদের হয়েছে।
স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন,সত্যিই ভয়ানক! এতদিন যে লোকটার কাছে মানুষ চিকিৎসা নিয়েছে, সে আসলে কোনো ডাক্তারই না। প্রশাসনের এই উদ্যোগ না হলে আমরা হয়তো কখনো জানতে পারতাম না।
ভুয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন দৃঢ় অবস্থান প্রশাসনের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই দেখছে সচেতন মহল।
স্বাস্থ্যসেবা মানুষের মৌলিক অধিকার— একে ঘিরে প্রতারণা প্রতিহত করতে প্রশাসনের এমন তৎপরতা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।