ঢাকার কেরানীগঞ্জে ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর এক ব্যবসায়ীর গুদামে রক্ষিত থাকা মালামাল লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ উঠেছে। এতে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী।
আজ রোববার বিকেলে কেরানীগঞ্জের আটি এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম (৪৮) এ অভিযোগ করেন। তিনি জানান, আটি বাজার বাদশারমোড় এলাকায় তার ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল নামের ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর পাইকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
[caption id="attachment_1910" align="alignnone" width="300"] সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন রফিকুল ইসলাম[/caption]
রফিকুল ইসলাম জানান, জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় তাজিম উদ্দিন (৪৫), ফয়েজ আলী (৪২), মো. আবু (৫৫) ও নাজিম উদ্দিন (৬৫) এর সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছিল। এ কারণে তারা আমাকে বারবার হয়রানি করেছে। এমনকি আমার স্ত্রী, শ্বশুর ও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলাও দায়ের করেছে। গত ৯ সেপ্টেম্বর ওই মামলায় আমাকে গ্রেপ্তারের পর জেলে পাঠানো হয়। পরদিন জামিনে ছাড়া পাই। ১০ সেপ্টেম্বর তাজিম ও তার সহযোগীরা আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝুলিয়ে দেয়। একপর্যায়ে সেদিনই গভীর রাতে তারা সংঘবদ্ধ হয়ে গুদামে প্রবেশ করে সেখানে রক্ষিত থাকা মালামাল লুট করে। তারা লুটপাট করেও ক্ষান্ত হননি। গুদাম ও গুদামের বাইরে থাকা ব্যবসায়িক মালামাল বহনে ব্যবহৃত পিকআপভ্যানে তাঁরা আগুন ধরিয়ে দেন। ওই সময় পুলিশের টহল দল আগুন দেখতে পেয়ে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন।
ব্যবসায়ী রফিকুলের দাবি, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তার প্রায় ৯০ লাখ টাকার এলইডি টিভি, ব্লেন্ডার, বৈদ্যুতিক চুলাসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডে প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যের ওই পিকআপভ্যানটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করেন, এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করার পরও কোনো প্রতিকার পাননি। বরং তাজিমের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় তিনি নিজেই জেল খেটেছেন। তাঁর দাবি, তিনি এবছর সরকারকে ৬৪ লাখ টাকা ভ্যাট দিয়েছেন। এরপরও প্রশাসন তাকে রক্ষা ও সহায়তা করছে না। তিনি স্বরাষ্ট্র ও আইন উপদেষ্টার কাছে ন্যায্য বিচার দাবি করেছেন।
আটি বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই শহিদুল ইসলাম জানান, ১১ সেপ্টেম্বর রাত আড়াইটার দিকে টহল দেওয়ার সময় দোকানের সামনে থাকা গাড়ি ও মালামালে আগুন জ্বলতে দেখি। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসে কল করি এবং স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন পুরোপুরি নিভিয়ে ফেলে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তাজিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, রফিকুলের গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জমিটি আমার। ওই জমি নিয়ে তিনবার সালিশ হয়েছে। তিনবারই আমার পক্ষে রায় এসেছে। তিনি আরও বলেন, রফিকুল জোর করে এখনও ওই জমিতে ব্যবসা চালাচ্ছেন। তিনি কয়েক বছর ধরে জমির ভাড়াও দিচ্ছেন না। তার ব্যবসায়িক গুদামে লুট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
কেরানীগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুল হক ডাবলু বলেন, ওই জমিটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে পারিবারিকভাবে দ্বন্দ্ব রয়েছে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। দুপক্ষ পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দিয়েছেন। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে যিনি দোষী বলে প্রতীয়মান হবেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।